Tuesday, May 5, 2015

আরবী ভাষার মরণ ...!

Source LINK  C/O, Shaikh Muzammel Al-hoque

আরবী ভাষার মরণ ...!

আরব কবি হাফেজ ইব্রাহীম (মৃঃ১৯৩২) শোক বিদগ্ধ কলমে আরবী ভাষার পক্ষ থেকে ৪৬ লাইনের এক হৃদয় স্পর্শী কবিতা লিখেছিলেন। কবিতার মধ্যে দিয়ে অংকন করেছিলেন আরবী ভাষার এক হৃদয় বিদারক করুন ছবি। সেই কবিতা থেকে ৬ টি পংতি নিম্নে তুলে ধরলাম।


أنا البحر في أحشائه الدر كامن فهل ساءلوا الغواص عن صدفاتي
فيا وَيحَكُم أبلى وتَبلى مَحاسِني ومنْكمْ وإنْ عَزَّ الدّواءُ أساتِي
فلا تَكِلُوني للزّمانِ فإنّني أخافُ عليكم أن تَحينَ وَفاتي

[আমি গহীন সুমুদ্র ভিতরটা মোর মনি মুক্তায় ভরা// ডুবরীদের সরিলেনা কেন কি দেখেছে আমার গর্ভে তারা? ধ্বংস তোমাদের যদি হারাই মোর সব অলঙ্কার// বাঁচাতে আমাকে দাওয়াই তোমরা করবেই আবিষ্কার! জামানার দোষে দুষিবে জানি করি না অস্বীকার// মরন মোরে নিয়াছে ঘিরিয়া সে ভয় শুধু করি যে নির্বিকার!!]
আরবী শুধু ভাষাই নয়। অন্য ভাষার ন্যায় শুধু যোগাযোগের মাধ্যমই নয়। সভ্যতা ও সংস্কৃতির আলোক মশালই নয়। বরং তা আল্লাহ্‌র কেতাবের ভাষা। আরবী মানে ইসলাম, আরবী মানে ঈমান, আরবী মানে আকীদা, আমল ও আখলাক। দুনিয়াতে দ্বিতীয় কোন ভাষা নেই যা আরবীর সমকক্ষ হতে পারে। উমার রাঃ যথার্থই বলেছেনঃ

   تعلموا العربية فإنها من دينكم 

তোমরা আরবী শিক্ষা করো কেননা আরবী দ্বীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ’’। এ ভাষার গর্ভে কত যে মনি- মুক্তা তা খুঁজতে বলেছেন আল্লাহ্‌র নবী মুহাম্মাদ সঃ। বলেছেনঃ 

  اعربوا القرآن والتمسوا غرائبه (المستدرك) 

তোমরা কোরআন কে ‘এ’রাব’ দিয়ে পড়বে এবং এর মাধ্যমে কালামুল্লাহর রহস্যাদি উদঘাটন করবে’’। উলামগন বলেন, আল্লাহ্‌র নবী এ’রাব দিয়ে পাঠ কারীর জন্যে এক অক্ষরে ৭০ টি সাওয়াব আর এ’রাব ব্যতীত পাঠ কারীর জন্যে মাত্র ১০ টি সাওয়াবের কথা ঘোষণা করেছেন।
এ’রাব হল বাক্যের মধ্যে শব্দের অবস্থান ভেদে জবর,জের,পেশ, তানবীন যথাযত ভাবে লাগিয়ে পাঠ করাকে বলে। কেননা কেবল এ’রাব এর মধ্যে দিয়েই সঠিক অর্থ ফুটিয়ে তোলা যায়। সঠিক এ’রাব না দিতে পারলে অর্থ শুদ্ধ হয়না তাই নয় বরং অর্থ হারিয়ে যায়। সঠিক অর্থ অনুধাবনের ক্ষমতা তারাই রাখেন যারা আরবী ভাষার গভীর পাণ্ডিত্য অর্জন করতে পারেন। 
আরবি ভাষার দৈন্য-দশার কথা ভাবতেই আজ মনটা শিউরে উঠে! ইসলামের শত্রুরা নানা ভাবে, নানা উপায়ে, নানা দিক থেকে, নানা প্রকার ছলা-কলা-কৌশল চালিয়ে এই ভাষাকে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছে। বড় বড় বিদ্যা পিঠে আরবী শিখানোর নামে আরবির কলিজা চিবিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। ট্যালেন্টদের কে সেখান থেকে ব্রেইন ওয়াশ করে নামধারী উচ্চতর ডিগ্রী দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। অগণিত মুসলিম ও আরব স্কলার সেখানকার উচ্চতম ডিগ্রী নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আরবীর প্রফেসর হয়ে আছেন অথচ তাঁরা এক লাইন আরবী শুদ্ধ করে বলতে পারেন না। তাঁদের ছাত্ররা কি হবে তা সহজেই অনুমেয়।
সালামা মুসা, ইব্রাহীম আনিস, আনিস ফারিহা, সাইদ আক্কল, ইব্রাহীম মুস্তফা ও দাউদ আব্দুহ প্রমুখদের মত স্কলারগন আরবির উচ্চতম ডিগ্রী ধারণ করে আরবী ভাষার গলায় ছুড়ি চালিয়েছেন অবলীলাক্রমে। তাঁদের কথা, কাজ, লেখা ও গবেষণা আরবদের কেই আরবীর দুশমন বানিয়েছে। আরবির গভীর চর্চাকে তারা নিষ্প্রয়োজন মনে করেছে। তাদের সন্তানেরাও আরবিকে ঘৃণা করতে শিখেছে। আপনি আরবিতে কথা বললেও তাঁরা ইংরেজি বলে শিক্ষিত হওয়ার চেষ্টা করবে। তারা মনে করে আরবির গভীর চর্চা অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করেনা।
অনারবদের কথা তো বলাই বাহুল্য! তারা তো আরবির পি এইচ ডি হয়েও একটি আরবী বাক্য বলতে সাহস করেন না। একটি আরবী চিঠি লিখতে পারেননা। তাদের স্কুল কলেজ এবং উনিভার্সিটিতে কেউ সারা জীবন অধ্যায়ন করলেও আরবির সাধারণ জ্ঞান অর্জন করতে পারেনা। আরবীর প্রফেসর হয়ে আরবির ক্লাসে ইংরেজিতে বক্তৃতা দেন। একজন প্রফেসরের পারফরমেন্স দেখলে তিনি যে আরবির প্রফেসর তা ঘুণাক্ষরেও বুঝা যাবেনা। আসলে তিনি ডিগ্রী চেয়েছেন আরবি চাননি। 
উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আরবির প্রফেসর হিসাবে তাদেরকেই নিয়োগ দেয়া হয় যাদের ওই সব প্রতিষ্ঠানের উচ্চতর সনদ রয়েছে। ফলে আরবীর পণ্ডিতেরা ওই সব স্থান থেকে মাহরুম থাকেন। আল-আজহারের আরবির ডঃ আর ক্যামব্রিজের আরবির ডঃ চাকুরীর ইন্টার্ভিউ দিলে ক্যামব্রিজের ডঃ সফল হবেন তা ১০০% নিশ্চিত। এমন কি আল আজহারের দক্ষ প্রফেসরকে দরখাস্ত করারই সুযোগ দেয়া হবে না।
বাস্তবে আরবী শিক্ষা বিদায় নিতে চলেছে। সে দিন বেশী দূরে নয় যখন বাইবেল ও তাওরাতের মত কোরআনের ভাষা পড়ে বুঝার মত লোক বাকী থাকবেনা। এভাবেই সেদিন বিদায় নিবে ইসলাম। এসব কয়জনে বুঝতে পারেন! আরবীর মৃত্যু ঘণ্টার আওয়াজ কয়জন কানে শুনেছেন? এ ভাষার মৃত্যু হলে কোরআনের মৃত্যু হবে তা নিশ্চিত। টুপি দাঁড়ি তাসবীহ সুরমা ও পাগরীর হিরিক পড়লেও অসবের মধ্যে ইসলাম খুঁজে পাওয়া যাবেনা!
মনে হয় আমরা সে সময়ের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছি যখন ইসলামের নাম ছাড়া আর কিছু বাকী থাকবেনা। কোরআনের অক্ষর ছাড়া আর কিছু খুঁজে পাওয়া যাবেনা- এমনটিই আল্লাহর রাসুল সঃ বলে গেছেন!!

No comments:

Post a Comment